Class 36:কম্পিউটার আর্কিটেকচার এবং ইতিহাস
🕰️ কম্পিউটার ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
মানুষ তার কাজকে সহজ করতে যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে, আর এরই ধারাবাহিকতায় এসেছে কম্পিউটার।
-
২৭০০ খ্রিস্টপূর্বে, প্রথম গণনা যন্ত্র Abacus আবিষ্কৃত হয়। এটি কাঠ বা বাঁশের তৈরি একটি ফ্রেমে রাখা গুটির মাধ্যমে কাজ করত।
-
১৭০৩ সালে, Gottfried Wilhelm Leibniz সর্বপ্রথম Binary Number System আবিষ্কার করেন, যা কম্পিউটারের ভিত্তি গড়ে দেয়।
-
১৮৩৭ সালে, Charles Babbage আবিষ্কার করেন পৃথিবীর প্রথম মেকানিক্যাল কম্পিউটার, যার নাম Analytical Engine।
এজন্য তাকে Father of the Computer বলা হয়।
🧾 Analytical Engine এবং Punch Card
- Analytical Engine-এ ইনপুট দেয়ার জন্য Punch Card ব্যবহার করা হতো।
- এটি একধরনের শক্ত কাগজ যেটাতে গর্ত করে তথ্য encode করা হতো।
- গর্তের উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতির ভিত্তিতে কম্পিউটার বুঝত কোন নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
👩💻 বিশ্বের প্রথম প্রোগ্রামার
Ada Lovelace (১৮১৫–১৮৫২) ছিলেন বিশ্বের প্রথম প্রোগ্রামার।
তিনি ১৮৪৩ সালে Charles Babbage-এর Analytical Engine-এর জন্য একটি অ্যালগরিদম লিখেন, যেটি Bernoulli Numbers গণনা করতে পারত।
🧠 Theoretical Computer Science এর জনক
Alan Turing কে বলা হয় Father of Theoretical Computer Science।
Alan Turing-কে Father of Theoretical Computer Science বলা হয় কারণ তিনি কম্পিউটারের theoretical foundation গড়ে তোলেন এবং Turing Machine ধারণা দেন। যেগুলোর ভিত্তিতেই আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞান দাঁড়িয়ে আছে।
১. Turing Machine (1936)
Turing Machine ছিল একটি কল্পিত যন্ত্র, যা নির্দিষ্ট নিয়মে ইনপুট পেলে যে কোনো গণনাযোগ্য সমস্যার সমাধান করতে পারত। এটি প্রথম বুঝিয়ে দেয়:
- কোন সমস্যাগুলো কম্পিউটারে সমাধানযোগ্য (computable)
- আর কোন সমস্যাগুলো সমাধানযোগ্য নয় (non-computable)
এই ধারণা থেকেই আধুনিক কম্পিউটার ও অ্যালগরিদম ডিজাইনের ভিত্তি তৈরি হয়েছে।
📌 উদাহরণ: আজকের সফটওয়্যার, কোড, প্রোগ্রাম - সবই Turing Machine-এর theoretical foundation এর উপর তৈরি।
২. Computability Theory জন্ম
Turing-এর গবেষণা থেকেই তৈরি হয় Computability Theory। এই শাখা ঠিক করে দেয়:
- কোন কাজগুলো কম্পিউটারে করা সম্ভব,
- কোন কাজগুলো অসম্ভব।
এই শাখাই ছিল Theoretical Computer Science এর মূল ভিত্তি।
৩. কোড ব্রেকিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সূচনা
-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে Turing জার্মানির Enigma Code ভাঙার জন্য একটি মেশিন (Bombe) তৈরি করেন। এটি আধুনিক কম্পিউটারের ধারণা বাস্তবে রূপ দিতে সহায়তা করে।
-
তিনি একটি বিখ্যাত প্রশ্ন করেন:
"Can machines think?"
এই প্রশ্ন থেকেই Artificial Intelligence (AI) এর ধারণার সূচনা হয়।
Alan Turing শুধু একজন গাণিতিক বিজ্ঞানী ছিলেন না, তিনি ছিলেন ভবিষ্যতের প্রযুক্তির দিকদর্শক। তার চিন্তাধারা এবং তাত্ত্বিক মডেলগুলো আজকের পুরো কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভিত্তি।
এই কারণেই তাঁকে বলা হয়: "Father of Theoretical Computer Science"
💡 প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটার
- ১৯৪৫ সালে, ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Computer) তৈরি করা হয়।
- এটি ছিল বিশ্বের প্রথম ইলেকট্রনিক জেনারেল-পারপাস কম্পিউটার।
- এতে Vacuum Tube ব্যবহৃত হতো, যা অনেক বড় ও গরম হতো।
কিভাবে বিশাল আকৃতির কম্পিউটার ছোট হলো?
প্রথম দিকের কম্পিউটারগুলো যেমন ENIAC, সেগুলো তৈরি হতো Vacuum Tube দিয়ে। এগুলোর আকার ছিল বিশাল, অনেক বিদ্যুৎ খরচ হতো এবং খুব গরম হয়ে যেত। অনেক সময় একটি ছোট সমস্যার জন্য পুরো মেশিন বন্ধ হয়ে যেত। তাই, বিজ্ঞানীরা খুঁজছিলেন এমন কোনো প্রযুক্তি যা:
- আকারে ছোট হবে,
- কম বিদ্যুৎ খরচ করবে,
- কম তাপ উৎপন্ন করবে,
- এবং নির্ভরযোগ্যভাবে কাজ করবে।
এই প্রয়োজন থেকেই শুরু হয় কম্পিউটারের বিবর্তনের যাত্রা।
পরিবর্তনের ধাপসমূহ:
১. Transistor (1947):
Vacuum Tube-এর বিকল্প হিসেবে Transistor আবিষ্কৃত হয়। এটি ছিল একধরনের ছোট ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ, যেটি একই কাজ করতে পারতো অনেক কম জায়গা ও শক্তি দিয়ে। ট্রানজিস্টরের সুবিধা হলো:
- এটি ছোট আকারের,
- কম গরম হয়,
- বেশি দিন টেকে।
এই কারণে Transistor ব্যবহার করে কম্পিউটার আরও ছোট ও কার্যকর হলো।
২. Integrated Circuit (IC) (1958):
এরপর বিজ্ঞানীরা একাধিক ট্রানজিস্টরকে একসাথে একটি ছোট চিপে বসিয়ে তৈরি করলেন Integrated Circuit (IC)। এর ফলে:
- একই সার্কিটে অনেক কাজ করা সম্ভব হলো,
- কম খরচে অনেক শক্তিশালী যন্ত্র তৈরি করা গেল,
- কম্পিউটার আরও ছোট ও দ্রুততর হলো।
৩. Microprocessor (1971):
এরপর আসে সবচেয়ে বড় বিপ্লব – Microprocessor। Intel 4004 ছিল পৃথিবীর প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর। এটি একটি ছোট চিপ, যেখানে পুরো একটি CPU-এর কাজ করা যায়। এর ফলে:
- কম্পিউটার তৈরি করা আরও সহজ হলো,
- ব্যক্তি পর্যায়ে কম্পিউটার (Personal Computer) আসা শুরু করল,
- ঘরে বসে মানুষ কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারল।
৪. VLSI (Very Large Scale Integration):
সবশেষে, VLSI প্রযুক্তির মাধ্যমে হাজার হাজার ট্রানজিস্টর ও সার্কিট একসাথে একটি ছোট চিপে স্থাপন করা সম্ভব হয়। এর ফলাফল:
- কম্পিউটার আরও বেশি শক্তিশালী হলো,
- মোবাইল, ল্যাপটপ, স্মার্ট ডিভাইসের মতো ছোট যন্ত্রে কম্পিউটার শক্তি যোগ হলো।
🧮 বিট ও বাইট
কম্পিউটার তথ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণে বিট (bit) এবং বাইট (byte) ব্যবহার করে।
- ১ Byte = ৮ Bits
- ১ Bit = ০ অথবা ১ (Binary value)
🧠 র্যাম (RAM) ও মেমোরি
RAM এর পূর্ণরূপ হলো Random Access Memory।
এটি একটি Primary Memory, যা ভলাটাইল (Volatile) মেমোরি।
এর মানে হলো, কম্পিউটার বন্ধ হলে RAM-এ সংরক্ষিত তথ্য মুছে যায়।
RAM সাধারণত কাজের সময়কার তথ্য বা চলমান প্রোগ্রামগুলো সাময়িকভাবে রাখে।
অন্যদিকে,
- SSD (Solid State Drive) এবং
- HDD (Hard Disk Drive)
এই দুটি হলো Secondary Memory, যেখানে দীর্ঘমেয়াদে ডেটা সংরক্ষণ করা যায় এবং কম্পিউটার বন্ধ হলেও তথ্য থাকে।
🖥️ CPU (Central Processing Unit)
CPU-এর ভেতরে নিচের অংশগুলো থাকে:
- ALU (Arithmetic Logic Unit): গাণিতিক ও লজিক্যাল কাজ করে
- CU (Control Unit): CPU-এর সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে
- Registers: অস্থায়ীভাবে তথ্য ধরে রাখে
- Cache Memory: দ্রুত গতির ছোট মেমোরি, বারবার ব্যবহৃত ডেটা রাখে
💼 IBM, Apple, এবং Microsoft-এর প্রাথমিক কম্পিউটার ইতিহাস
🖥️ IBM (International Business Machines)
- 1952 সালে, IBM তৈরি করে তাদের প্রথম commercial computer - IBM 701।
- এরপর 1964 সালে, IBM তৈরি করে System/360, একটি Mainframe Computer সিরিজ যা ব্যবসা, গবেষণা এবং সরকারে বিপ্লব আনে।
- এই কম্পিউটারগুলোর মেমোরি ছিল kilobytes (KB) লেভেলের - সাধারণত 8KB থেকে 512KB পর্যন্ত।
- প্রাথমিকভাবে 8-bit বা 16-bit architecture ব্যবহৃত হতো, পরবর্তীতে তা 32-bit হয়।
📌 বিষেষত্ব:
IBM-এর Mainframe কম্পিউটারগুলো ছিল অনেক বড় এবং ভারী, কিন্তু শক্তিশালী। আজও ব্যাংকিং বা সরকারি কাজে Mainframe-এর ভিত্তি ব্যবহার করা হয়।
🍎 Apple Inc.
- 1976 সালে, Steve Jobs এবং Steve Wozniak তৈরি করেন Apple I - একটি single-board পার্সোনাল কম্পিউটার।
- 1977 সালে, Apple II বাজারে আসে, যা প্রথম color graphics, keyboard, and floppy drive সাপোর্ট করত।
- Apple I তে ছিল 8-bit MOS 6502 processor এবং 4KB RAM।
- Apple II তেও ছিল 8-bit processor, এবং RAM ছিল 4KB থেকে 48KB পর্যন্ত উন্নত করা যেত।
📌 Apple-এর ভূমিকা:
Apple ই ছিল সেই কোম্পানি যারা পার্সোনাল কম্পিউটারকে সাধারণ মানুষের নাগালে এনে দেয়। Apple II ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয় স্কুল, ব্যবসা এবং ঘরের ব্যবহারের জন্য।
🪟 Microsoft
- 1980 সালে, Microsoft তৈরি করে MS-DOS (Microsoft Disk Operating System), যেটা IBM PC-তে ব্যবহার হতো।
- পরে 1985 সালে, তারা তৈরি করে Windows 1.0 - একটি GUI-ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম যা MS-DOS-এর উপর কাজ করত।
- এই অপারেটিং সিস্টেমগুলো প্রথমে 8-bit এবং 16-bit architecture এ চলে, পরে 32-bit এবং 64-bit OS আসে।
- Windows OS এর কারণে কম্পিউটার ব্যবহার অনেক সহজ হয়, এবং সাধারণ মানুষও কম্পিউটার চালাতে আগ্রহী হয়।
📌 Microsoft-এর অবদান:
MS-DOS এবং Windows-এর মাধ্যমে Microsoft সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে বিপ্লব আনে। তারা হার্ডওয়্যার না বানিয়ে সফটওয়্যারের উপর ফোকাস করে, যার ফলে তাদের OS অনেক ধরনের কম্পিউটারেই চলত।
🔢 Bit Architecture Summary:
Year | Company | Product | Bit | RAM (approx.) |
---|---|---|---|---|
1952 | IBM | IBM 701 | 36-bit | 8KB+ |
1964 | IBM | System/360 | 8/16-bit | 16–512KB |
1976 | Apple | Apple I | 8-bit | 4KB |
1977 | Apple | Apple II | 8-bit | 4–48KB |
1980 | Microsoft | MS-DOS (for IBM PC) | 16-bit | 64–640KB |
1985 | Microsoft | Windows 1.0 | 16-bit | ~1MB |
IBM শুরুতে মেইনফ্রেম বানালেও পরে পার্সোনাল কম্পিউটারে রূপান্তর হয়।
Apple এবং Microsoft ছিল সেই দুই কোম্পানি যারা সাধারণ মানুষের হাতে কম্পিউটার এনে দেয় - Apple হার্ডওয়্যার দিয়ে আর Microsoft সফটওয়্যার দিয়ে।
তাদের তৈরি কম্পিউটার ও OS গুলোর bit size শুরুতে 8-bit, পরে 16-bit → 32-bit → 64-bit পর্যন্ত উন্নত হয়, যার ফলে গতি, ক্ষমতা ও ব্যবহারযোগ্যতা অনেক বাড়ে।
[Author:@shahriar-em0n Date: 2025-06-05 Category: interview-qa/class-wise ]